সোমবার,

২০ জানুয়ারি ২০২৫

|

৭ মাঘ ১৪৩১

|

১৯ রজব ১৪৪৬

সোমবার,

২০ জানুয়ারি ২০২৫

|

৭ মাঘ ১৪৩১

|

১৯ রজব ১৪৪৬

ABC News

মানিকগঞ্জে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ ৭৯৫ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন! 

মোঃ শাহ আলম, বিশেষ প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ০৪:৪৮ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২৪

আপডেট: ০৪:৪৯ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২৪

মানিকগঞ্জে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ ৭৯৫ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন! 

 মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান , সচিব ও উদ্যোক্তার অর্থের বিনিময়ে ৭৯৫ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধনের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের সরকারি নিবন্ধন আইডি বন্ধ করেছে প্রশাসন। 

জানাগেছে- উপজেলার চরকাটারী ইউনিয়নের চারিপাশে যমুনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল হওয়ায় মোটা অংকের বিনিময়ে এসব সনদ গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত অবৈধভাবে কাগজ পত্র ছাড়াই অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।

এসকল বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন স্বয়ং ইউপি চেয়ারম্যান। কিন্তু কয়েকজন ইউপি সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান, সচিব ও সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছে। 

এসকল বিষয়টি নিশ্চিত করে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত আহসানুল আলম। তিনি বলেন, চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৭৯৫ জনকে অবৈধ জন্মনিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি খুব শ্রীঘ্রই তদন্ত কাজ শুরু করবেন। এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৭৯৫ জনকে জন্মনিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগে চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি নিবন্ধন আইডি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে সনদ নিবন্ধণে ভোগান্তিতে পরার আশংকা করছেন ইউনিয়নবাসীদের।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এ অবৈধ কাজে সহায়তাকারী পরিষদের উদ্যোক্তা নিজের দোষ স্বীকার করে তিন শত টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছেন ইউনিয়ন উদ্যোক্তা জলিল মন্ডল তা চেয়ারম্যানের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। 

জেলার স্থানীয় সরকার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চরকটারী ইউনিয়নে ৭৯৫ জনের অবৈধ জন্ম নিবন্ধন দেয়া হয়। গত ১০ মাসের মধ্যে হওয়া ওই জন্মনিবন্ধনগুলো বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়। পরে জন্ম নিবন্ধনগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। 

এ বিষয়ে চরকাটারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কম্পিউটারের কাজ তেমন বুঝি না। আমি টাচ মোবাইলটাও ভাল করে চালাতে পারি না। পরিষদের উদ্যোক্তা মোঃ জলিল মন্ডলের কাছে আমার জন্ম নিবন্ধনের আইডির পাসওয়ার্ড থাকতো। সেই সুযোগেই উদ্যোক্তা জলিল এরকম অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমিও খুব বিপদে পরছি। 

গত বৃহস্পতিবার চরকাটারি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে উদ্যোক্তা মোঃ জলিল মন্ডলকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তার ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, শুনেছি সে অসুস্থ- ছুটিতে আছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দরা বলছেন উদ্যোক্তা জলিলকে কয়েকদিন ধরেই এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। চেয়ারম্যান নিজে বাঁচার জন্য উদ্যোক্তার একার ঘারে দোষ চাপাচ্ছেন। এ নিয়ে ওই ইউনিয়নের স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যাচাই-বাছাই না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে। ইউনিয়নের সব জন্মনিবন্ধন বন্ধ করলে নানা সমস্যা ও ভোগান্তি হতে পারে স্থানীয় লোকজন জানান।

 ইউনিয়নের বোর্ডঘর গ্রামের বাসিন্দা সাঈদ, ওয়াজ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৭৯৫ জনের যে জন্মনিবন্ধন হয়েছে, তারা কেউ আমাদের এলাকার বাসিন্দা না। চেয়ারম্যান, সচিব ও উদ্যোক্তারা টাকার বিনিময়ে অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছেন। কোন প্রকার কাগজ পত্র ছাড়াই অর্থের বিনিময়ে করা হয়েছে।আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত পূর্ব কঠিন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।

ইউপি সদস্য মো. জয়েদ আলি মোল্লা বলেন, ৭৯৫ জনের অবৈধ এ জন্মনিবন্ধন হওয়ায় আমাদের চরাঞ্চলের মানুষের ক্ষতি হবে। এর দায় চেয়ারম্যান, সচিব ও উদ্যোক্তার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরকাটারী ইউনিয়নে দীর্ঘদিন কোনো সচিব ছিল না। উপজেলার পাশ্ববর্তী বাচামারা ইউনিয়নের সচিব আলমগীর হোসেন এই ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত ২০ অক্টোবর নতুন সচিব মো. সেলিম দায়িত্ব গ্রহণের পরই অবৈধ জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি সবার নজরে আসে এবং তিনি ইউএনওকে অবগত করেন। 

 

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহসানুল আলম জানান,আমরা ইতিমধ্যেই চেয়ারম্যান ও সচিবের নিবন্ধন আইডি বন্ধ করে দিয়েছি। বিষয়টি লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবগত করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি করেছে, তবে এখনো তদন্ত সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের হাতে এসে পৌঁছেনি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে। যাচাই বাছাই করে রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে।