মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা বিআইডব্লিউটিএ'র ড্রেজার বেইজ(নৌ সংরক্ষণ সংস্থা) অফিসের সামান্য পশ্চিম দিকে যমুনা নদীর পাড়ে রক্ষিত কোটি টাকার বিপুল সংখ্যক ফোম টাইপ প্লাস্টিক ফ্লোটার(এইচডিপিই) আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার(১৪ নভেম্বর) সকাল সোয়া ৮ টার দিকে এই রহস্যময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। তবে পুড়ে যাওয়া সামগ্রীর সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীতে নাব্য সংকট নিরসনে ড্রেজিং কাজে ব্যবহৃত পাইপ পানিতে ভাসিয়ে রাখার জন্য এই ফোম ব্যবহার করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নদীর পাড়ে রাখা সামগ্রীতে আগুন লাগার খবর ড্রেজার অফিসে জানানো হলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। উত্তরদিক থেকে প্রবাহিত বাতাসে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নদী পাড়ে এই মূল্যবান সামগ্রী থাকলেও সেখানে ছিল না কোন নিরাপত্তারক্ষী। শুধু অফিসের গেইটে নিয়োজিত থাকে আনসার সদস্যরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন আনসার সদস্য বলেন, বিড়ি সিগারেট কিংবা শুধু ম্যাচের কাঠি দিয়ে এই ফ্লোটিং বোর্ডে আগুন লাগানো সম্ভব নয়। পেট্রোল জাতীয় কোন দাহ্য পদার্থের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে এখানে। ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে আটাত্তরটি প্লাস্টিক ফ্লোটার পুড়ে গেছে। যার প্রতিটির মূল্য ৩ লাখ টাকার অধিক।
আরিচা ড্রেজার বেইজ সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী(যান্ত্রিক) আবু সাঈদ জানান, সকাল সোয়া ৮টার দিকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের একঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কতগুলো ফ্লোটার এবং কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সঠিকভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। এটি একটি পরিকল্পিত নাশকতা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কাউকে সনাক্ত করতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে উর্ধতন কর্মকর্তারা আসলে এর সঠিক কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বিষ্ময়কর তথ্য প্রদান করেন। তারা বলেন, এটি কোন নাশকতা নয়। এটি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত কাজ। তারা তাদের মালের হিসাব মিলাতে না পেরে (দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে) এমন পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিজেরাই ঘটিয়েছে। যাকে বলে "উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে।"
মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়া জানান, সকাল পৌনে নয়টার দিকে সংবাদের ভিত্তিতে শিবালয় ও ঘিওর উপজেলার তিনটি ইউনিট প্রায় দু’ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হচ্ছে।
আরিচা ড্রেজিং বেইজ কার্যালয়ের ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ রহমান সরকার দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় গিয়েছিলেন। ঢাকা থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে তিনি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আরিচার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে তিনি অফিসে এসে পৌঁছান। একারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানেন না বলে জানান তিনি।